Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গলায় ফাঁস লাগাইছি পূর্ণিমা রাইতে।

গলায় ফাঁস লাগাইছি পূর্ণিমা রাইতে। পা'ও দুইখান ছটফট কইরা খুঁজতাছিলো জমিন। চক্ষু দুইটা ঝাপসা হইয়া আইলো ধীরে। মৃত্যুর যন্ত্রণার চাইয়াও অধিক যন্ত্রণা মনের বিত্তে পোড়াইয়া আঙ্গার কইরা দিতাছে, পালানোর একমাত্র পথ কবর।

ঝাপসা চক্ষুতে ভাইসা উঠলো জরির মুখখান।নদীর কিনারে অপেক্ষা করতো আমার লাইগা জরি। দূর থেইকা দেখতাম, দেরি হইছে দেইখ্যা গোশশায় লাল হইয়া ফুইটা আছে গোমড়া মুখের পদ্মাফুল। আমার দিক ফিরাও দেহেনা। গামছার খুঁচি থেইকা কাজলের কোটা হাতে দিতাম। চুলে গুঁইজা দিতাম গাজরা। জরি মেলা খুশি হইতো। বুকের মইধ্যে জড়াইয়া নিতো আমারে। চুমু খাইতো। মন প্রাণ উজাড় কইরা ভালোবাইসা হারাইয়া যাইতো কোথাও একটা। মায়ের মত রাগ করতো, অভিমান করতো। আমি জিগাইতাম আইচ্ছা তুই আমারে ছাইড়া যাবি না তো? জরির চোখে তহন জল জমতো, নাক উঁচু কইরা কইতো ছাইড়া যামু ক্যান? মানুষ তহনই ছাইড়া যায় যহন মায়া উইড়া যায়। আপনে আমারে সারা জীবন মায়ার রশিতে বাইন্ধা রাখবেন।
আমি জরিরে মায়ার রশিতে বাইন্ধা রাখতে পারলাম না। জরির মায়েরে কানপড়া দিলো শুয়ারের বাচ্চা জমিদারের পোলা। টেহার কাছে বেচা যাইবো আমার জরি কথাখান বিশ্বাস করলাম না। বিশ্বাস করলাম পরে যহন জরি আমারে মাথা নিচু কইরা কইলো "ভুইলা যাও আমারে সুজন"..
ফ্যালফ্যাল কইরা চাইয়া রইলাম। মাইনষের চইলা যাওনের দৃশ্য এত ভাঙচুর চালায় বুকের ভিতরে আমি ঐ দিন বুঝছি। একটা বড় চাকরি, আলিশান বাড়ি আর একটু সুন্দর মাডি দিয়া খোদা আমারে বানাইলেই জরি আমার হইতো।
মানুষ সব কষ্ট সইবার পারে, ভালোবাসার কষ্ট সইবার পারে না। আমিও পারলাম না। জরি লাল বেনারসি শাড়িতে বউ সাজছে। বউ সাজলে জরিরে সুন্দর লাগে, ঐ দিন জরিরে জগতের সবচাইতে কুৎসিত মনে হইছে। চোখ ঝইলসা গেছে, জরি তিন কবুলে নিজেরে তুইলা দিলো পর বেটার হাতে। আমি নিজেরে তুইলা দিলাম মরণের হাতে। জরি পালকিতে চড়ছে, আমি খাটিয়ায়। জরিরে উঠাইছে নতুন ঘরে, আমার নামাইছে নতুন কব্বরে। জরির জায়গা হইছে নতুন মাইনসের বুকে। খিক খিক! আমার জায়গা হইছে নতুন মাডির অনন্তকালের আন্ধাইরের ভিতরে।
জরি—
প্রতি বৃহস্পতিবার তুই ক্যান আমার কব্বর দেখবার আহোস? মরা মানুষরে হাজার ডাকলেও ফিরা আহে না। তুই ঠিকি কইছিস, মায়া শেষ হইয়া গেলেই মানুষের পিরিত উইড়া যায়। তোরও তো পিরিত উইড়া গেছে আমার থেইকা, আমার উইড়া গেছে দুনিয়া থেইকা।
ক্যান আহোস এইহানে? তুই চইলা যা, তোর ঐ চোখের জল পালাইয়া আমার কবরখান নরক বানাইস না আর। তোরে আমার সহ্য হয় না..তুই চইলা যা, জরি তুই চইলা যায়..
'কবর- শূন্য দুই'
লেখা: আরিফ হুসাইন



Post a Comment

0 Comments