Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নতুন কবরের পাশে মানুষ যত বেদনা নিয়ে কাঁদে ........

নতুন কবরের পাশে মানুষ যত বেদনা নিয়ে কাঁদে তত বেদনা নিয়ে পুরোনো কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদে না। অথচ আমি খুব কাঁদছি, আমি দু'হাতে মুছেও শেষ করতে পারছি না দু'চোখের জল এত বেশি কাঁদছি। গতকাল বড় একটা কম্পানির একাউন্টিং পদে চাকরি পেয়েছি আমি। চাকরি পাওয়ার পর মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় ফিরেছি। আমি কাকে দিবো এই খুশির সংবাদ? কীভাবে মা'কে জানাবো,মা আমার চাকরি হয়ে গেছে। এখন থেকে তোমাকে আর কারোর বাড়িতে কাজ করতে হবে না, আর চিকিৎসার অভাবে পাঁজড় ভাঙা ব্যাথাটা নিয়ে না ঘুমিয়ে গলাকাটা মুরগীর মত এপাশ ওপাশ করে কাটাতে হবে না সারা রাত।

একটা চাকরি! হায় রে একটা চাকরির জন্য কত্ত কিছু যে হারাইলাম জীবনে। বাবা মায়েরে রেখে আরেকটা বিয়ে করে চলে গেলো। মায়ের দুঃখের শেষ নাই। মায়েরে দেখতাম খোদার কাছে প্রায়শই মৃত্যু কমনা করতো। রমজান মাসেও মা আমার পানি আর লবন দিয়ে ভাত ঢলে খায়, ইফতারর সময় পাশের বাসা থেকে হলুদ পাতা খুঁজে এনে সে পাতা খেয়ে ইফতার করে। আমার বুকটা হুঁহুঁ করে ভেঙে যায়। একদিন খুব বড় হবো, একদিন মায়ের দুঃখ কষ্ট কমিয়ে দিব। মা বড়ো কষ্ট করে আমায় বড় করলেন একদিন আমি মায়ের দুঃখ কষ্ট কিছুটা হলেও দূর করবো সে-জন্য। মায়েদের জীবন বোধহয় এমন হয়, সুখের খুব কাছাকাছি এসে ফুরি‌য়ে যায়। মায়ের জীবন ফুরিয়ে গেলো, মা মারা গেলো দু' বছর আগে।
গত বছর কলেজের ক্যান্টিনে ডাল দিয়ে ভাত খেতে খেতে প্রেমিকা বলল, আমার বাসা থেকে বিয়ে করার জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। আমায় ভুলে যেয়ে নিজের দিকে খেয়াল দাও, নিজের ক্যারিয়ারের দিকে তাকাও। সামনের তোমার পরিক্ষা। ভালো ফলাফল করলে চাকরি জুটে যাবে। চাকরি পেয়ে আমাকে আবার ভুলে যেও না। প্রেমিকার এমন কথা শুনে গলা দিয়ে ভাত নামেনি আমার, ভাতগুলোকে ডান বাম করতে করতে চোখের জলে ভাতের প্লেট ভিঁজে উঠেছিল। চোখ ভর্তি জল নিয়েও সে সময় প্রেমিকাকে বললাম, তোমাকে আমার পাশে এ সময় খুব জরুরী। আমাকে ছেড়ে যেও না। প্রেমিকা পাতে ডাল তুলে দিতে দিতে বলল, পাগলামি করো না একদম। তোমার পাগলীর বয়স না এখন, এখন ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস করার বয়স। আমি পাগলামী করলাম না আর।
একটা চাকরির জন্য কত্তো কিছু যে হারালাম রে। গত মাসে ঢাকায় চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। চা দোকানে গেলাম খেলা দেখতে। আমাকে দেখে এলাকার এক বড় ভাই চা'য়ের অর্ডার দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, চাকরির কি অবস্থা? আমি উনারে বললাম, ভাই চাকরি তো নাই, তবে ঢাকায় একটা ইন্টারভিউ আছে। চা খাবো না, থাকলে দুই'শো টাকা দেন ইন্টারভিউ দিয়ে আসি। তিনি বললেন, লাগলে আরোও দুই কাপ চা খা, তবুও টাকা ধার চেও না। তুমি টাকা নিলে পরিশোধ করবা কেমনে? তুমি তো বেকার।
কাল চাকরিটা পাওয়ার পর রাতে সেই বড় ভাই ই দুই হাজার টাকা খরচ করে মিষ্টি, পাঞ্জাবী নিয়ে এসেছেন তার বোনের সাথে আমার বিবাহের আলাপ করতে। সেই বড় ভাই হাসতে হাসতে বললেন, আমি ঠিকি জানতাম তুমি পারবা একদিন, তোমার মাঝে সে ট্যালেন্ট মেধা আছে।
বাস্তবতা বড়োই কঠিন, ক্যারিয়ার ছাড়া পুরুষের জন্য পৃথিবী একটি জলন্ত উনুন। যে উনুনে পুড়ে কয়লা হতে হয় রোজ। নিজ পায়ের তলার মাটিও সরে যেতে চায় মাঝেমধ্যে বেকারত্ব অভিশাপকে পুঁজি করে।
এই নশ্বরে রক্তশূণ্য নারীকে ভালোবাসার মানুষ থাকলেও, অর্থশূন্য পুরুষকে ভালোবাসার জন্যে কেউ থাকে না, কেউ না...
লেখা: আরিফ হুসাইন।



Post a Comment

0 Comments