ওরা বলে ভালোবাসি বলার পর প্রেম উড়ে যায়, অথচ লক্ষ্মীটি আমি প্রতিদিন তোমার প্রেমে পড়ি কয়েক হাজার বার। তুমি যখন উনুনে চা বসিয়ে এলাচ ঢেলে ঘ্রাণ ছড়াও সারা ঘরে, সুঁতির শাড়ি পরে ছাদের নরম রোধে একলা হাটো উদাস মনে আমি তখন তোমার প্রেমে পড়ি খুব।
ওরা বলে একদিন সমস্ত কথা ফুরিয়ে যায়, অথচ লক্ষীটি আমার কথারা দিন-দিন মহাবিশ্বের মতো বেড়েই চলেছে। আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছে হয় তোমার সাথে তুমুল জ্বরেও। আমার বলতে ইচ্ছে হয় পৃথিবীর খেলার ছলে প্যালেস্টাইনের যুদ্ধকে ভালোবাসা শিশুর গল্প থেকে মিশরের সভ্যতার ইতিহাস। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলে কেন বাবার রক্তচাপ বেড়ে যায়, মা কেনো মাঝেমধ্যে মৃত্যু কমনা করে প্রার্থনায় বসে। বলতে ইচ্ছে করে, রাজনীতি কেন আমার পছন্দ না, হুমায়ুনের “সঙ্গীনি” কেনো আমার ভীষণ পছন্দের। শুধু মন খারাপ থাকলেই কেনো আমি নজরুলের “দাঁড়ালে দুয়ারে” শুনি, কেনো টাইটানিক সিনেমা দেখে জ্যাকের মৃত্যুর চেয়েও রোজের বেঁচে যাওয়াটা আফোসের লাগে, কিংবা কি কারণে রুদ্র আমার প্রিয় কবি। আমার গল্প যদি একেবারে ফুরিয়েও যায় কোন কোন দিন, তখন শুধু তোমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে একশো একটা রুপকথার গল্প বলতে ইচ্ছে করে আমার লক্ষ্মীটি।
ওরা বলে একটা সময় পর মান অভিমানের আর কোন মূল্য থাকে না। অথচ বিশ্বাস করো তোমার রাগ অভিমানের চড়া মূল্য দিতে ইচ্ছে হয় আমার লক্ষ্মীটি। অভিমান হলে তোমার যে ক'ফোট জল চোখের কাজলকে ভেস্তে দিয়ে চলে যায়, সেই ক'ফোটা জল যেতে যেতে যে একলক্ষ অভিশাপ আমায় দেয়, সে অভিশাপ হাসিমুখে গ্রহণ করতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে সেই অভিশাপ পকেটে ভরে শ'খানেক দোকান ঘুরে তন্নতন্ন করে খুঁজে আনতে কাঁচা ফুল। বাড়িতে ফিরে তোমার চুলের খোপায় সে ফুল গুঁজে দিতে দিতে রাগে ফুলে লাল হওয়া গাল দু'টো টিপে দিয়ে বলতে, রাগ করে না লক্ষ্মী আমার। ফুল পেয়ে রাগ কমে গেলে বিড়াল ছানার মত তোমার বুকে টুক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমার মাথার প্রতিটি চুলে আঙুল ডুবাতে। কিন্তু ঈশ্বর তো আমায় অত আঙুল দেয়নি। কেনো দেয়নি এই ভেবে আমার দারুণ মন খরাপ হয়। কান্না পায় খুব। কান্না পেলে আমার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে একলক্ষ হাতে, অত হাত না থাকাতেও আমার আফসোস হয় খুব লক্ষ্মীটি।
ওদের কথা বাদ দিলাম, তুমিও বলতে পারবে না আমি তোমায় নিয়ে ভাবি না। আমি তোমায় নিয়ে খুব ভাবি লক্ষ্মীটি আমার। কোন রঙের শাড়িতে তোমায় দেবী দেবী লাগে! তুমি সমুদ্র ভালোবাসো নাকি পাহাড়? ভূত বিশ্বাস করো? সব পাখির নাম জানো? ঠোঁটে থাকতে চাও আমার, নাকি বুকে? চোখের পাতায় রাখতে চাও, আমায় নাকি লেখার খাতায়। কেন তোমার চুল ঝরে যায়, কেন রাত্তিরে জ্বর আসে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বিশ্বাস করো লক্ষ্মীটি পৃথিবীতে এত শীতল যুদ্ধ তবুও আমি সমস্ত যুদ্ধ অন্যপাশে রেখে তোমায় ভাবি। তেমার কথা ভাবতে ভাবতে আমি নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাই, অফিসে লেট করে ফেলি, ফাইল-পত্রে তারিখ ভুল লেখি, তেল গরম হওয়ার আগে ডিম ভেঙে দেই কড়াইতে, পুড়িয়ে ফেলি ঠোঁট গরম চা'য়ে তোমাকে ভাবতে ভাবতে।
ওরা বলে পুরুষ হারামখোর বাসি হলে ছেড়ে যায়। আমি থাকবো লক্ষ্মীটি। আমি তোমার নক্ষত্র হয়ে থাকবো, তোমার নিরাপদ বুক হয়ে থাকবো, আমি থাকবো তোমার রোদপুকুর হয়ে, আমি তোমার কোল হয়ে থাকবো, তোমার আদর হয়ে থাকবো, আমি তোমার শাড়ির আঁচল হয়ে থাকবো, চোখের কাজল হয়ে থাকবো, বুকের পাঁজড় হয়ে থাকবো, আমি তোমার হয়ে থাকবো লক্ষ্মীটি। বিশ্বাস করো লক্ষ্মীটি, যেহেতু নিজের কাছে ফেরার কোনো উপায় আমার জানা নাই, সেহেতু আমার আছে শুধু তোমার কাছে ছুঁটে যাওয়া।
পৃথিবীর যাবতীয় শীতল যুদ্ধ পিছনে ফেলে তোমার কাছে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই, আমার আর কোন জগৎ নাই লক্ষ্মীটি।
0 Comments